ট্রাম্পের কয়লার মিথ্যা – কীভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিশ্বকে ধোঁকা দিতে চান

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জার্মানির জ্বালানি নীতি সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা শুধুমাত্র বিভ্রান্তিকর নয়, বরং মনে হয় তার রিপাবলিকান সমর্থকদের জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষে উদ্বুদ্ধ করাই উদ্দেশ্য।

ট্রাম্প দাবি করেছেন যে জার্মানি প্রতিদিন একটি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করছে এবং আবার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরে যাচ্ছে।

এই দাবিগুলোর কোনও ভিত্তি নেই এবং তা জার্মানির প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

প্রসঙ্গে ট্রাম্পের মিথ্যা দাবি

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জর্জিয়ার সাভানায় এক প্রচার সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন:
„জার্মানি চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা অ্যাঙ্গেলাকে অন্য কাউকে দিয়ে বদলে দেয়, আর এখন সেই লোকটি প্রতি সপ্তাহে একটি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে।“

এবং ঠিক গতকাল ট্রাম্প আবারও দাবি করেন যে জার্মানি প্রতিদিন একটি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করছে। ট্রাম্প মিথ্যে বলেন – এবং তিনি সেই মিথ্যাকে বারবার বলেন…
সূত্র: Stuttgarter Zeitung

ট্রাম্প আরও বলেন: „জার্মানরা বায়ু টারবাইন ব্যবহার করে দেখেছিল, কিন্তু তা কাজ করেনি।“ তিনি বলেন, জার্মানি সব বিকল্প চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিছুই ফল দেয়নি। „এখন তারা প্রতি সপ্তাহে একটি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র খুলছে“, ট্রাম্প এমন দাবি করেন—কোনও প্রমাণ বা বিস্তারিত ছাড়াই।

তিনি বারবার „সুন্দর, পরিষ্কার কয়লা“র প্রশংসা করেন শক্তির উৎস হিসেবে। কিন্তু ট্রাম্প যতবার মিথ্যা বলেন, তার সমর্থকরা ততই তা বিশ্বাস করে।

বাস্তবতা: সম্পূর্ণ বিপরীত

জার্মানিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করা হচ্ছে – ঠিক গত সপ্তাহেই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ভেঙে ফেলা হয়েছে।

এবং বিশ্বব্যাপীও একই অবস্থা: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমছে, এবং বায়ু ও সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা স্পষ্টতই ট্রাম্প এবং জীবাশ্ম জ্বালানি লবির স্বার্থে নয়।

তথ্য যাচাই: জার্মানির শক্তি রূপান্তর ও কয়লা ত্যাগ

বাস্তবে, জার্মানি বহু বছর ধরে একটি ধারাবাহিক শক্তি রূপান্তরের নীতি অনুসরণ করছে, যার লক্ষ্য হলো নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বৃদ্ধি করা এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসা। এই কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধাপে ধাপে বন্ধ করা।

জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সি অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মোট ১১ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। এই সংখ্যা দেশটির কয়লা-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিক হ্রাস নির্দেশ করে।

বিশ্বব্যাপী প্রবণতা: বায়ু ও সৌরশক্তির বৃদ্ধি

জার্মানি ছাড়াও, বিশ্বজুড়ে বায়ু ও সৌর শক্তির অংশ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নলিখিত তথ্য বিশ্বব্যাপী এই প্রবণতা তুলে ধরে:

  • ২০০০: বায়ু ও সৌর শক্তির অংশ ছিল ১%-এর কম।
  • ২০০৫: প্রায় ১.১% (বায়ু: ০.৯৫%, সৌর: ০.১৫%)।
  • ২০১০: প্রায় ২.৮%।
  • ২০১৫: প্রায় ৫% (বায়ু: ৩.৫%, সৌর: ১.৫%)।
  • ২০২০: প্রায় ৯.৩%।
  • ২০২৩: ১৩.৪% (বায়ু: ৭.৮%, সৌর: ৫.৫%)।
  • ২০২৪: প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র সৌর শক্তির অংশ ৬.৯%।

এই সংখ্যাগুলো নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে বৈশ্বিক পরিবর্তন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে এবং ট্রাম্পের দাবি খণ্ডন করে।

উপসংহার

জার্মানির জ্বালানি নীতি সম্পর্কে ট্রাম্পের মিথ্যা বক্তব্য সম্ভবত রিপাবলিকান সমর্থকদের জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষে উসকানি দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা – জার্মানি ও বিশ্বব্যাপী – স্পষ্টভাবে দেখায় যে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়ে চলেছি। এই তথ্যগুলো ট্রাম্পের বক্তব্যকে একটি সচেতন মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে উন্মোচন করে।

পরিশিষ্ট: ৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ইবেনবিউরেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস

জার্মানিতে কয়লার যুগের প্রতীকী সমাপ্তি

২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল, ইবেনবিউরেন শহরের প্রাক্তন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সফলভাবে ভেঙে ফেলা হয়। প্রথমে ১০০ মিটার উঁচু বয়লার হাউসটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়। এরপর ১২৫ মিটার উচ্চতার কুলিং টাওয়ারটি স্টিলের তার ব্যবহার করে ভেঙে ফেলা হয়।

এই পদক্ষেপগুলো ছিল জার্মানির বিদ্যুৎ গ্রিডে নর্থ সি থেকে বায়ু বিদ্যুৎ সংযোগ করার জন্য অ্যাম্প্রিয়ন (Amprion) কর্তৃক একটি কনভার্টার স্টেশন নির্মাণের প্রস্তুতির অংশ।

YouTube player

ইবেনবিউরেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস – এখন নর্থ সি-এর বায়ু শক্তির জন্য কনভার্টার স্টেশন:


WDR রিপোর্ট (জার্মান ভাষায়)

ট্যাগসমূহ: #Trumpমিথ্যা, #কয়লাত্যাগ, #জ্বালানিরূপান্তর, #ভু新闻, #নবায়নযোগ্যশক্তি

error

Gefällt Dir der Blog-Demokratie? Einfach weiterempfehlen